Friday, 29 September 2023

অনেক কাল আগের কথা - "শত কথা বলতে পারো, কিন্তু একটা কথা ও লিখো না" - আর, পুরোনো দিনের কথা শুনতে ও হয়। তাই, এই লেখাটার আগে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম, লেখার। ভুক্তভোগী এবং আইনজীবী র নাম, পরিচয় গোপন রেখে ই লিখবো। জানি, লেখাটি বেশ লম্বা হবে, তবে আশা করি আমার বন্ধু রা ধৈর্য্য ধরে পড়বে। না লিখলে একটা ভয়ঙ্কর অন্যায়, অন্যায্য ঘটনা কে তুলে ধরবো কি করে! জেনে বুঝে প্রতিবাদ না করে ছেড়ে দেওয়া যায়না।

প্রসঙ্গ ক্ষতিপূরণ। কিসের জন্যে, না, এ্যাসিড-হানার। অবশ্য অন্য অনেক কারণেই নির্যাতিত/তিতা দের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য হয়। যেমন, ধর্ষণ, মানব পাচার ইত্যাদি। তবে হ্যাঁ, দুর্ঘটনায় মৃত্যু তে ও ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য হয়, যেমন, বিষ মদ পানে....। তা, যাই হোক, এই টাকা টা কেন পায়! ভারতের সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকের মাথা উঁচু রেখে বাঁচার অর্থাৎ মর্যাদা অধিকার আছে, এবং তা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সামাজিক হিংসা র কারণে যদি কোনো নাগরিকের মর্যাদা রক্ষা, জীবন জীবিকার অধিকার লঙ্ঘিত হয়, তাহলে রাষ্ট্র সেই নাগরিক কে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। এই কথা টা আমি বলছি না, বলছেন মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট। সেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে, National Legal Services Authority বা NLSA Scheme বানিয়ে রাজ্যের কাছে, অর্থাৎ State Legal Services Authority বা SLSA র কাছে। যেকোনো রকমের হিংসাই ফৌজদারি case বা Criminal Offences, এবং পুলিশ Case হওয়া বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে যে কোনো কারণে ই কোনো নাগরিক দগ্ধ হলে তা অবশ্যই পুলিশ জানবে। এবার আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনায় দগ্ধ হওয়া আর এ্যাসিড-হানার কারণে দগ্ধ হওয়া তো এক ব্যাপার নয়! পুলিশ ই গুরুত্ব বিচার করে আইন অনুযায়ী, দ্রুততার সঙ্গে FIR করে অনুসন্ধান শুরু করবে। District Legal Services Authority বা DLSA কে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে, ঘটনা র ১৫ দিনের মাথায় চিকিৎসা র জন্যে DLSA প্রথম কিস্তির টাকা দিয়ে দেবে। বাদবাকি টাকা DLSA র তদন্তের পর দেবে। এটা নিয়ম। কিন্তু নিয়ম মানা হয় কৈ? ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে কর্তৃপক্ষের এতো অনীহা, যে‌ প্রায়শই উচ্চ আদালতে Case করে তবেই সেই টাকা পাওয়া যায়। পাওয়া যায় কি? অন্য রাজ্য যেখানে চিকিৎসা র প্রয়োজনে পূর্ণ দায়িত্ব নেয়, সেখানে এই রাজ্য তিন লাখ দিতেই নির্যাতিত/তিতা র কাছে অবমাননা কর সর্ত রাখে। বক্তব্য, নির্দেশ যে ই দিক, টাকা রাজ্য দিচ্ছে! নির্দেশনা য় আছে, এ্যাসিড-হানা র জন্যে ১০.০০০.০০/- এবং নাবালক/নাবালিকা র আরও বেশি। কিন্তু এই রাজ্য, তার নাগরিকদের প্রতি দায়িত্ব পালন না করে অশিক্ষিত/ অল্প শিক্ষিত, দৃষ্টি সহ অন্যান্য অঙ্গ/প্রত্যঙ্গ হারানো নাগরিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে সর্ত য় সই করাচ্ছে। রাজ্য ৩.০০০.০০/- টাকা র একটা ভগ্নাংশ ৭৫০০০/- নির্যাতিত/তিতা র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাকি ২.২৫.০০০/- Mutual Funds এ ১০ বছরের জন্যে লগ্নি করছে। স্থায়ী আমানতে মাসিক একটা নির্দিষ্ট টাকা সুদ হিসেবে পাওয়া যায়, কিন্তু এঁরা পান একেক মাসে এক এক রকম। সবার ই চিকিৎসা র অনেক পর্বই অর্থাভাবে আটকে আছে। রাজ্যের অদ্ভুত খামখেয়ালী নীতি র জন্যে মানুষগুলিকে কম করে ১০ বছর অত্যন্ত কষ্টকর ভাবে বেঁচে থাকার যন্ত্রনা ভোগ করতে হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ বছরের পরে সর্ত য় Auto-renewal রাখা থাকছে। মানে, মানুষ গুলি কোনো দিন ই ঐ টাকা পাবেন না।
অনেকেই এমন ভুক্তভোগী বলে এদের মধ্যে একজন কে আমি আমাদের সংস্থা, সাউথ কলকাতা সান্নিধ্য র তরফে, ২০২০ র ডিসেম্বর মাসে মহামান্য কলকাতা উচ্চ আদালতের এক আইনজীবী র কাছে নিয়ে যেতে ভদ্রলোক ২০২১ এর জানুয়ারী তে Case করেন। অবশ্যই এর খরচের ব্যাপারে আমরা ই এগিয়ে আসি। সেই ভুক্তভোগী র পরিবারের আয় প্রায় না থাকার মতো। করোনা পরিস্থিতি তে সকলের মতোই তাদেরকে ও ভয়ানক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তার সঙ্গে চিকিৎসা র প্রয়োজন। সব মিলিয়ে খুব অসুবিধে সত্ত্বেও সে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যায়। অবশ্যই সঙ্গে সেই উকিল বাবু সমানে সাহস যুগিয়ে গেছেন। দিনের পর দিন অপেক্ষা। আদালতে Case উঠবে উঠবে করেও দেরি হচ্ছে। শুধুই কঠোর অপেক্ষা! শেষ পর্যন্ত, ২০২৩ এর জুলাই মাসে শুনানি শুরু হয়। তারপর আদালতে র রায় ভুক্তভোগী র পক্ষে গেলেও সেই SLSA র সর্ত! "টাকা আমার, আমি দেবোনা", রাজ্যের কোনো এক মন্ত্রী এক সময় বলেছিল, "কলেজ শিক্ষক দের 'মাইনে' আমরা দি, আমাদের কথা শুনতে হবে....." এক ই সুরে সেই সর্তে সই করতে চাপ। আমি একসময় আবার একটা Case করার কথা ভাবতেও শুরু করে দিয়েছিলাম। অবশ্যই সেই মানুষটির জেদের কাছে SLSA হার মেনে নিয়ে পুরো টাকা ওর Bank Account এ দিতে বাধ্য হয়েছে। 
এবার আমাদের লড়াই চালিয়ে যাবার ইচ্ছে দ্বীগুণ হলো। একজন কে যদি পাওয়ানো যায়, অনেককেই পাওয়াতে হবে। কাঁটা গাছের ফুল দেরি তে হলে ও ফোটে, আর দেখতে ও খুব সুন্দর হয়।

No comments:

Post a Comment